অভিযোগ সময় প্রতিবেদকঃ
বিএনপি-জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিনে রাজধানীসহ সারা দেশেই মানুষের স্বাভাবিক চলাচল অনেকটা থমকে গেছে। সোমবার রাজধানীতে তিনটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নয়টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যানবাহন ভাঙচুর হয়েছে অনেক এলাকায়। অবরোধ সমর্থক ও বিরোধীদের পালটাপালটি শোডাউনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অনেক এলাকা।
এতে জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে দূরের যাত্রা বাতিল করছেন। এসব কারণে বন্ধ ছিল দূরপাল্লার অধিকাংশ বাস চলাচল। মানুষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলেও সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফেরেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বড় বড় নগর এবং অধিকাংশ জেলা শহর সন্ধ্যার পর প্রাণচাঞ্চল্য হারায়। দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও মানুষের মধ্যে ছিল এক ধরনের অস্বস্তি। ফলে যানবাহনগুলোকে যাত্রী সংকট এবং অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ক্রেতা সংকটে পড়তে হয়েছে। এর মধ্যে অব্যাহত রয়েছে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড়।
আরও পড়ুন: একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সমঝোতায় গিয়ে সরে দাঁড়ান: সরকারকে মঈন খান
যুগান্তরের প্রতিবেদক, বিভিন্ন ব্যুরো, জেলা ও থানা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়কে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আগুন ও সংঘর্ষের ঘটনাগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন মানুষ। দ্বিতীয় দফার অবরোধে রাজপথে বিএনপি নেতাকর্মীদের তৎপরতা ছিল প্রথম দফার চেয়ে অনেকটাই কম। সারা দেশে শক্ত অবস্থান ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মামলা, হামলা, গ্রেফতারের কারণে নেতাকর্মীদের বড় অংশ এলাকাছাড়া হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও তাদের নিপীড়ন করছেন। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে সোমবার পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৫৯ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ কারণেই কৌশলী ভূমিকায় থেকে তারা কর্মসূচি পালন করছেন। এক্ষেত্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের মূল লক্ষ্য, ধারাবাহিকভাবে আসতে থাকা কর্মসূচিগুলোর সফল বাস্তবায়ন এবং গ্রেফতার এড়িয়ে চলা।
এদিকে ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের শেষ দিন সোমবার রাজধানীতে তিনটিসহ গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বগুড়ায় ৯টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামে একটি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়। গাজীপুরে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। যশোর, বরিশাল ও বগুড়ায় পাঁচ কলেজে তালা দিয়েছে ছাত্রদল। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা তালা ভেঙে ফেলে। বগুড়া, নোয়াখালী ও গাজীপুরে নতুন ৭ মামলায় বিএনপির আড়াইশর বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জে বিভিন্ন থানার মামলায় বিএনপির অন্তত ৩ হাজার নেতাকর্মী আসামি। গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িঘর ছাড়া হাজারো নেতাকর্মী।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, রোববার সকাল ৪টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা (৩৮ ঘণ্টা, ২ দিন) পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২১টি আগুনের সংবাদ পেয়েছে তারা। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ১২টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর, কালিয়াকৈর, নারায়ণগঞ্জ) ৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (খাগড়াছড়ি, আনোয়ারা, পটিয়া) ৪টি, রাজশাহী বিভাগে (বগুড়া) ১টি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৫টি বাস, ২টি ট্রাক, ১টি প্রাইভেটকার, ১টি সিএনজি, ১টি লেগুনা পুড়ে যায়। এই ২১টি অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণ করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৪১টি ইউনিট ও ২৪২ জন জনবল কাজ করে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করা দেখা গেছে, দিনের বেলা থেকে রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এই ২ দিনে মোট ২১টি আগুনের মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৬টি আগুনের ঘটনা ঘটে। বাকি ৫টি ঘটনা দিনের অন্যান্য সময় সংঘটিত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক মোট ১১০টি আগুনের সংবাদ পেয়েছে তারা। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি, ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর ১টি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি, ২ নভেম্বর ৭টি, ৪ নভেম্বর ৬টি, ৫ নভেম্বর ১৩টি, ৬ নভেম্বর ১০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ার সুপার মার্কেটের সামনে বিকল্প পরিবহণের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মিরপুরে ২টি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সকাল ১১টায় মিরপুর ১ নম্বর চিড়িয়াখানা রোডে দিশারী পরিবহণের ১টি এবং বিকাল ৪টায় সনি সিনেমা হলের সামনে আলিফ পরিবহণের আরেকটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে। শাহআলী থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে।
গাবতলী : সোমবার গাবতলীতে কোনো পিকেটারের দেখা মেলেনি। তবে সড়কে বাঁশের লাঠি হাতে দলবেঁধে মহড়া দিতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের। তারা মোটরসাইকেল ও ট্রাক নিয়ে র্যালি করছেন। গাবতলী টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস। বাস টার্মিনাল ছিল প্রায় ফাঁকা।
দিনভর দুয়েকজন যাত্রীকে বাস টার্মিনালে ঘুরতে দেখা গেছে। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস ছাড়তে নানামুখী চাপ থাকলেও মূলত যাত্রী না থাকায় তারা ছাড়তে পারেননি। শনিবার চুয়াডাঙ্গা থেকে মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় এসেছিলেন আব্দুর রহিম।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১১টায় আব্দুর রহিম যুগান্তরকে বলেন, সকাল ৮টা থেকে টার্মিনালে বসে আছি। একটা বাসও ছাড়ছে না। এমনিতে অসুস্থ তার ওপর এত সময় ধরে বসে আছি। অনেক খারাপ লাগছে। বাস না পেলে চেষ্টা করব এই এলাকায় কোনো একটা হোটেলে থাকার। ঝিনাইদহ থেকে আসা আব্দুল জলিল জানান, ছোট ছেলে রফিকুল ছুটি শেষে কুয়েতে যাচ্ছে। তাকে এয়ারপোর্টে তুলে দিতে এসেছিলাম। বাড়ি ফিরে যাব তাই গাবতলী এসেছি। কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।
বাস ছাড়া নিয়ে প্রশাসন, বাস মালিক, পরিবহণ নেতা থেকে শুরু করে নানামুখী চাপ আছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন কাউন্টারের পরিবহণ শ্রমিকরা। বাস ছাড়ার বিষয়ে গাবতলীতে একটি বাস কাউন্টারের পরিবহণ শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাড়ি ছাড়ার চাপ অনেক। গাড়ি তো রেডি আছে কিন্তু যাত্রী না থাকলে গাড়ি কেমন করে ছাড়ব। সকাল থেকে হাতেগোনা দু-একজন এসেছে। কিন্তু দু-একজন যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার গন্তব্যে যাওয়ার খরচও তো উঠবে না। রাবেয়া পরিবহণের একজন স্টাফ যুগান্তরকে জানান, গতকালও কয়েকটি টিকিট বিক্রি করেছিলেন তারা। কিন্তু ন্যূনতম যাত্রী না হওয়ায় তারা ছেড়ে যাননি। যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার দূরপাল্লার বাসে পুলিশ দেবে এসকর্ট করবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু যাত্রী না থাকলে যাব কেমন করে। গাড়িতে আগুন দিলে বা ভাঙচুরে ক্ষতিপূরণ দেবে কিন্তু গাড়ি যাত্রীর অভাবে ছাড়া গেল না এই ক্ষতি আমরা কীভাবে পোষাব।
উত্তরা : অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে উত্তরা এলাকায় সীমিত পরিসরে চলাচল করেছে গণপরিবহণ। যাত্রী না থাকায় দিনের বেলায় বন্ধ ছিল দূরপাল্লার অধিকাংশ বাস কাউন্টার। চাকরিজীবী নগরবাসীর যাতায়াতে উত্তরার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে স্থানীয় গণপরিবহণ চললেও অন্যান্য দিনের তুলনায় সকাল থেকেই যাত্রী ও পরিবহণের সংখ্যা খুবই কম।
সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তরার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর, হাউজবিল্ডিং, রাজলক্ষ্মী, জসিমউদ্দিন, আজমপুর ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বাস কাউন্টারগুলোতে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে বাস ছেড়ে না আসায় তাদের টিকিট বিক্রিও বন্ধ। আব্দুল্লাহপুরে হামদান এক্সপ্রেসের কাউন্টারের টিকিটম্যান সোহেল যুগান্তরকে জানায়, যাত্রী না থাকায় সারা দিন বসে আছি। অল্পকিছু যাত্রী মোবাইলে রাতের টিকিট কনফার্ম করছে। সন্ধ্যার পর কিছু গাড়ি ছাড়ার কথা রয়েছে।
রাজধানীর প্রবেশদ্বার ডেমরায় দ্বিতীয় দফায় বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সোমবার লোকাল যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী সব যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। তবে যাত্রী ছিল কম। ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল থেকেই কড়া সতর্ক অবস্থায় ছিল পুলিশ।
আইনজীবীদের মিছিল : অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে সুপ্রিমকোর্টে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। সোমবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সামনে থেকে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের ব্যানারে মিছিল বের করেন বিএনপিপন্থি শতাধিক আইনজীবী। পরে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলসংলগ্ন সুপ্রিমকোর্টের গেটে এলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এরপর সেখানে অবস্থান করে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। এ সময় অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে দেশের সাধারণ মানুষ অংশ নেবে না।
বিএনপির সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ : সরকার পতনের একদফা দাবিতে দ্বিতীয় ধাপের টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করেছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে খিলগাঁও এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। দুপুরে বিএনপির সহস্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে শান্তিনগর ও মালিবাগ এলাকায় বিক্ষোভ হয়। সকালে বনানী এলাকায় বিক্ষোভ করে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। ধানমন্ডিতে বিক্ষোভ মিছিল করে স্বেচ্ছাসেবক দল।
সকালে বাংলামোটর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল। বিক্ষোভ মিছিল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলও। মগবাজারে বিক্ষোভ মিছিলসহ রেললাইন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল। হাইকোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মিছিল করে ছাত্রদল। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের নেতৃত্বে গুলশানে মিছিল করে শতাধিক নেতাকর্মী।
গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা দলের বিক্ষোভ : এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মিছিল করে গণতন্ত্র মঞ্চ। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। বিক্ষোভ মিছিল করেছে ১২ দলীয় জোট। সোমবার সকালে বিজয়নগর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। দুপুর ১২টায় কাকরাইল ও পুরানা পল্টনে মিছিল করেছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)। দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে পল্টন পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
এছাড়া নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ড. রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টিসহ সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ মিছিল করে। অবরোধের সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে বিক্ষোভ করে আমার বাংলাদেশ পার্টিও (এবি পার্টি)।
জামায়াতের অবরোধ ও বিক্ষোভ : এদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সকালে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, জুরাইন রেলগেট, ডেমরা, শাহজাহানপুর, বাসাবো ও হাজারীবাগে রেলপথ এবং সড়কপথ বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াত। এছাড়া মিরপুর, উত্তরা, দক্ষিণখান, পল্লবী, বাড্ডা ও মালিবাগ এলাকায়ও বিক্ষোভ মিছিল করে দলটির নেতাকর্মীরা।
গাজীপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী পশ্চিম : সোমবার সকাল ৭টায় চান্দনা চৌরাস্তা-জয়দেবপুর সড়কের নলজানি অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে মিছিলকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ ও ধাওয়া খেয়ে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশের লাঠিচার্জে মহানগর বিএনপি নেতা জিএস সুরুজ আহমেদসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানান মহানগর বিএনপি নেতারা। পুলিশ মিছিল থেকে বাসন থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির ও বাসন থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিলন হোসেনসহ ৬ জনকে আটক করেছে। এছাড়া আদালতপাড়া থেকে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর দোকানপাড় এলাকায় ভোরে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। চালক ও সহকারী দ্রুত বাস থেকে নেমে রক্ষা পান। বাসের মালিক আব্দুল আজিজ জানান, বাসটি পোশাক শ্রমিকদের আনা-নেওয়ায় ব্যবহার হতো। এর আগে রোববার রাত ২টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ির-শিমুলতলী সড়কের বটতলায় নিরাপদ পরিবহণের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। টঙ্গীতে পিকেটিংয়ের সময় ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।
বগুড়া : শাজাহানপুরে সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে নির্মাণাধীন মহাসড়কে পানি ছিটানোর সময় পানিবাহী লরি থামিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। সরকারি আজিজুল হক কলেজের দুই ভবনের দরজায় তালা দেয় ছাত্রদল। পরে নিরাপত্তা কর্মীরা তালা ভেঙে ফেলে।
চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী : সোমবার ভারে নগরীর পাঁচলাইশ থানার আতুরার ডিপো তাহেরাবাদ এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় একটি ট্রাক। দুই গাড়ির চালককেও মারধর করা হয়। একই সময় আনোয়ারায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়ে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
রাজশাহী : মোহনপুরে মুরগির খাবার বোঝাই একটি ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে অবরোধ সমর্থকরা। সোমবার বিকাল ৩টার দিকে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে মোহনপুর উপজেলার নন্দনহাট মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ট্রাকের চালক জহুরুল ইসলাম জানান, অবরোধকারীরা ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করায় তিনি ট্রাক থামাতে বাধ্য হন।
চাটখিল (নোয়াখালী) : চাটখিল-ঢাকা মহাসড়কের ডাক বাংলা সংলগ্ন এলাকায় রোববার রাত ৮টায় একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে আশপাশের লোকজন আগুন নেভায়।
বরিশাল : সোমবার নগরীর জিলা স্কুলের সামনে ছাত্রদল এবং বগুড়া রোডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এছাড়া বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদল ও সদর উপজেলা যুবদল বিক্ষোভ মিছিল করে। এর আগে রোববার রাতে মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিএম কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
যশোরে তিনটি কলেজের ফটকে তালা : রোববার রাতে যশোরে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ছাত্রদল। এগুলো হলোÑযশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় (এম-এম কলেজ), যশোর সরকারি সিটি কলেজ ও যশোর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘সর্বাÍক অবরোধ’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ডও টানিয়ে দেয় তারা। সোমবার সকালে তালা ভেঙে কার্যক্রম শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এদিন ভোরে যশোর-বেনাপোল সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এছাড়া শহরের বিভিন্ন গলি, যশোর চৌগাছা সড়ক, যশোর মাগুরা সড়কে ঝটিকা মিছিল করে।
কিশোরগঞ্জ বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী ঘরছাড়া : কিশোরগঞ্জে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে সংঘর্ষে তিনজন বিএনপি কর্মী নিহতসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। নাশকতার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন থানার মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অন্তত ৩ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক আসামি। ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরিফুল আলমসহ ১৬৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া জেলার হাজারো নেতাকর্মী। জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দীন অভিযোগ করেন, সাজানো মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করছে পুলিশ। দিন-রাত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে না পেলে তাদের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং তাদের হয়রানি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী আÍগোপনে থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বিভিন্ন স্থানে মামলা ও গ্রেফতার : গাজীপুরের শ্রীপুরে তিনটি মামলায় বিএনপির ৬৬ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম সরকারকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান মাহমুদসহ চার নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেহেরপুর গ্রেফতার হয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন। নোয়াখালীর কবিরহাট ও চাটখিলে দুই মামলায় বিএনপির ১৪৭ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। বগুড়ায় নতুন দুই মামলায় আসামি বিএনপির ৫৫ নেতাকর্মী। এছাড়া শেরপুরে ৩ ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় বিএনপির ১ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Leave a Reply