( এরশাদ আলী)
সাভারের আশুলিয়ায় একটি ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের একমাত্র সন্তানের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বিস্মিত ওই ভবনের অন্যান্য ভাড়াটেসহ স্থানীয় লোকজন। নির্ঝঞ্ঝাট ওই পরিবারের করুণ পরিণতি মানতে পারছেন না তাঁরা।
গতকাল শনিবার রাতে আশুলিয়ার উত্তর গাজীরচটের ফকির বাড়ির মোড় এলাকার মেহেদী হাসানের মালিকানাধীন ছয়তলা ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে পোশাকশ্রমিক দম্পতি ও তাঁদের একমাত্র সন্তানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানার পুলিশ। এ ঘটনায় আজ রোববার দুপুরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করছেন নিহত বাবুলের বড় ভাই আয়নাল হক।নিহত বাবুল হোসেন (৫০), তাঁর স্ত্রী শাহিদা বেগম (৪০) পেশায় পোশাকশ্রমিক ও তাঁদের ছেলে মেহেদী হাসান জয় (১২) আশুলিয়ার একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বাবুল হোসেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের গরুড়া (ফুলবাড়ী) গ্রামের মৃত সইর উদ্দিনের ছেলে।
নিহত বাবুলের বোনজামাই আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে বাবুল সবার ছোট। সবাই তাঁকে ভীষণ আদর করতেন। বাবুল এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করেন। ভালোই চলছিল তাঁদের। সংসারে কখনো কোনো ঝামেলা হয়েছে বলে শোনেননি। তাঁরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চান।
আশুলিয়ার ছয়তলা ওই ভবনের প্রতি তলায় তিনটি করে ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে ভাড়াটে থাকেন।
সবাই কর্মজীবী। কেউ কাজ করেন পোশাক কারখানায়, কেউ রিকশাচালক। ওই ভবনের দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি ফ্ল্যাটে থাকত বাবুলের পরিবার। বাবুলের প্রতিবেশীরা জানান, পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে ভবনে বসবাস করলেও কারও সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না। দিনের প্রায় পুরোটা সময়ই তাঁদের ফ্ল্যাটের দরজা তালাবদ্ধ থাকত। অফিস শেষে বাড়ি ফিরেও ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে রাখতেন তাঁরা। এ জন্য হত্যার পর কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও কেউ টের পাননি। গতকাল (শনিবার) দুর্গন্ধ ছড়ানোর পর সবাই বিষয়টি টের পান।
বাবুলের প্রতিবেশী তাহমিনা বেগম বলেন, ‘আমরা প্রায় এক বছর ধরে এই ভবনে বসবাস করছি।
তবে কখনোই তাঁদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি।
ওনারা একটু একা থাকতেই পছন্দ করতেন। সব সময়ই দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা থাকত।’
{আশুলিয়ার জামগড়ায় বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানসহ তিনজনের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে ভবনের সামনে জড়ো হন স্থানীয় বাসিন্দারা ছবি: সংগৃহীত}
ভবনটির ঠিক সামনেই মুদিদোকান চালান মো. রাসেল। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় ছয় বছর ধরে এখানে দোকান করি। আশপাশের প্রায় সবাই আমার দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে থাকেন। নিহত ওই দম্পতিও মাঝেমধ্যে সদাইপাতি কিনতেন। তবে ওনারা অন্য সবার চেয়ে একেবারেই আলাদা ছিলেন। দীর্ঘদিন এলাকায় থাকলেও আমিসহ আশপাশের কোনো দোকানেই বাকিতে কোনো জিনিস কিনতেন না। এ ছাড়া ওনারা কখনোই একা বাসা থেকে বের হতেন না। যখনই বাইরে যেতেন, তিনজন একসঙ্গেই বের হতেন। এমনকি আমার দোকানে চা খেতে এলেও তিনজন একসঙ্গেই আসতেন।’
ভবনের মালিক শেখ মেহেদি হাসান বলেন, ৮-১০ বছর ধরে বাবুল হোসেন পরিবার নিয়ে ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকছেন। দুজনেই পোশাক কারখানায় কাজ করায় রাতে ফিরে সরাসরি ফ্ল্যাটে চলে যেতেন। অন্য ভাড়াটেদের সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। তাঁদের বিরুদ্ধে কখনো কারও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এমনকি বাসায় কোনো অতিথি নিয়ে আড্ডা দিয়েছেন, এমন কেউ দেখেননি। খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিল পরিবারটি।
গতকাল রাতে লাশ উদ্ধারের পর রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারসহ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও সিআইডির কর্মকর্তারা।
ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, গত শুক্রবার কোনো এক সময় হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। তিনজনকে হত্যা করা হলো পাশের ফ্ল্যাটের কেউ টের পেল না। আপাতত মনে হচ্ছে, তাঁদের চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। সব বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছেন দ্রুতই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারবেন।
Leave a Reply